Header Ads

Breaking News

অডিশন দিতাম আর কলকাতায় রাতের পর রাত স্টেশনে কাটাতাম : সিদ্ধার্থ



পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। সরকারি চাকরি ছেড়ে বাড়ির অমতে অভিনয় করা। কাজটা সহজ ছিল না। কলকাতায় এসে প্রথমের দিকে স্টেশনেই রাতের পর রাত কাটিয়েছেন। যদিও তাঁর মতে স্ট্রাগল নয় সবটাই শিক্ষা। বাধা পেরিয়ে আজ একের পর এক বাংলা ছবিতে অভিনয় করে চলেছেন। কিরকম ছিল সেই জার্নি? তা নিয়েই কলকাতা গ্লিটজের সঙ্গে আড্ডায় কানামাছি, প্রলয়, যোদ্ধা খ্যাত অভিনেতা সিদ্ধার্থ মন্ডল ওরফে ভিকি সিদ্ধার্থ। 

গ্লিটজ: অভিনয়ে আসার ইচ্ছেটা কবে থেকে হল?
সিদ্ধার্থ: ছোটবেলা থেকেই আমি আবৃত্তি, কুইজ প্রতিযোগিতা এসবে অংশগ্রহণ করতাম। কিন্তু অভিনয় করব কোনোদিন সেটা ভাবিনি। তবে হ্যাঁ ক্রিয়েটিভ কাজ করতে ভালো লাগত। পাড়ার অনুষ্ঠানে নাটক করতাম। ইচ্ছে ছিল এমন কিছু করা যেটা আর পাঁচজনের থেকে আলাদা হবে। পুরুলিয়া পলিটেকনিকে পড়তে যাওয়ার পর আমার অভিনয়ের শখ জাগে। কলেজ হোস্টেলে থাকার সময় পারফর্ম করতাম, তখন কোথাও মনে হতো আমি হয়তো পারব। মনে হচ্ছিলো ওই তিনশো জনের মধ্যে আমি আলাদা করে সবার নজর কাড়তে পারছি। তাদেরকে আনন্দ দিতে পারছি। সেখান থেকে ভালোলাগা শুরু হয়েছিল। আমি পুরুলিয়ার ছেলে। তাই ওখানে থেকে ওই সময় কিছু করা খুব একটা সহজ ছিল না। বিশেষ করে অভিনয়ের জগতে। ২০০৫-২০০৬ সাল। তখন পকেট মানিও বেশি থাকতো না যে কলকাতায় যাব একা। ৪ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে গিয়ে কলকাতার জন্য ট্রেন ধরতে হত। খুব একটা সহজ ছিল না জার্নিটা।


গ্লিটজ: অভিনয়ের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
সিদ্ধার্থ: ইটিভি বাংলায় মেগাস্টার বলে একটা শো হয়েছিল। ওখানে ছবি পাঠিয়েছিলাম। ওরা ফোন করে অডিশনের জন্য। ওখানে অডিশন দিই। ইটিভি মেগাস্টারে পারফর্ম করার সময় লিগামেন্টে চোট পেয়েছিলাম। কিন্তু তাও পারফর্ম করেছিলাম। সেকেন্ড রাউন্ডে আউট হয়ে গিয়েছিলাম। ওইসময় এক হাজার টাকা রোজগার করেছিলাম। তারপর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা শেষ করে হায়ার স্টাডিস করতে থাকি। পাশাপাশি চাকরি করতাম। তারপর চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে আসি। অডিশন দিতে থাকি। রূপসী বাংলার প্রফুল্ল সিরিয়ালে বদ্রু ডাকাতের চরিত্র পাই। তারপর প্রেমের ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ করি। এটার পর নায়িকা বলে একটা সিরিয়াল করি। এই সিরিয়ালটা করার সময়ই রাজ দা-র (রাজ চক্রবর্তী) চোখে পরি। তারপর কানামাছি, বোঝেনা সে বোঝেনা, প্রলয়, পারব না আমি ছাড়তে তোকে থেকে শুরু করে একের পর এক ছবি করি রাজ দা-র সঙ্গে। রাজ দা-র সহকারী হিসেবে কাজও করি।

গ্লিটজ: এই ইন্ডাস্ট্রিতে পথ কখনো মসৃণ হয় না। ওঠা, নামা লেগেই থাকে। সেক্ষত্রে চাকরি ছেড়ে অভিনয়ে আসায় বাড়ি থেকে কোন আপত্তি হয়নি?
সিদ্ধার্থ: ওঠা নামা সব পেশাতেই লেগে থাকে। তবে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা অনেকটাই বেশি থাকে। সবার জীবনেই স্ট্রাগল থাকে, আমার জীবনেও আছে। তবে স্ট্রাগলটাকে কখনো স্ট্রাগল হিসেবে দেখিনি, সবটাই শিক্ষণীয়। যা আমার জীবনে কাজে লাগছে। বাড়ি থেকে তো আপত্তি ছিলই। আমার মা বাবা দুজনেই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। কেউই এই পেশার সঙ্গে যুক্ত নয় বা আশেপাশেও কেউ ছিল না। তাই তাদের মনে ভয় ছিল। মধ্যবিত্ত পরিবারে যা হয় আর কি। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবে এটাই সবাই ভাবে। সরকারি চাকরি পেয়ে ছেড়ে দিয়ে এই পেশায় এসেছি। তাই চাপ তো অবশ্যই ছিল। বাড়ির লোক কথা বলা ছেড়ে দিয়েছিলো। ইগনোর করতো। কিন্তু তারাই আজ আমার সিনেমা দেখে। আমার পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলে। টিকিট কেটে ছবি দেখে। এখন আমি ভেঙে পড়লে তারাই আমার মনোবল বাড়ায়।


গ্লিটজ: এই মুহূর্তে কী কাজ করছ?
সিদ্ধার্থ: আপাতত লকডাউনের জন্য তো ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ। শেষ আমি জি-ফাইভে একটা কাজ করলাম। হেডকোয়ার্টার লালবাজার। আর হইচই-এর একটা সিরিজ করলাম। তবে খুব ছোট চরিত্র ছিল। আর বাকি কাজগুলো এই মুহূর্তে আটকে আছে।

গ্লিটজ: আজ থেকে পাঁচ বছর পর নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চাও?
সিদ্ধার্থ: 'মোদী' ওয়েব সিরিজে উমেশ শুক্লার মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। ক্যামিও ছিল। কিন্তু ওরকম পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে পারাটাই একটা অভিজ্ঞতা। পাঁচ বছরের মধ্যে ইচ্ছে আছে যেসমস্ত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করিনি, তাদের সঙ্গে কাজ করার। বিশেষ করে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ। জাতীয় স্তরের পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চাই। অন্যান্য ভাষাতেও কাজ করার ইচ্ছে আছে। যদিও জানি সেটা কঠিন। তবে স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখেছিলাম বলেই পুরুলিয়া থেকে আজ কলকাতায় আসতে পেরেছি। ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে কাজ করার খুব ইচ্ছে ছিল। একটা কাজ হতে হতেও হয়নি। তাই আমার মতে সময়টাও সঠিক হওয়া প্রয়োজন।

No comments