শেষ হয়েও হইল না শেষ
বাদশাহী আংটি ---- সেই ছোটবেলায় না একটু ভুল হলো , কিশোরবেলায় পড়া সেই গোয়েন্দা কাহিনী। অপেক্ষা করতাম কবে সেই কাহিনীর সিনেমা দেখব। কল্পনা করতাম যে
আমার প্রিয় সেই গল্পের সিনেমা কেমন হবে ! কিন্তু সেই সিনেমা যখন শেষ পর্যন্ত দেখলাম ঠিক কোথায় যেন একটা অতৃপ্তি থেকেই গেল। যাকে বলে মন ভরা তা ঠিক হয়ে উঠলো না।
কিন্তু কেন ? চিত্রসমালোচনা করব তাও কিনা আবার সন্দীপ রায়ের বানানো ছবির। যাক গে যা
থাকে কপালে। এ ছবির গল্প কম বেশি সকলেরই জানা। তাই বিশদে যাচ্ছি না।
গল্পের শুরুতে ফেলুদা চরিত্রে ড্যাশিং আবিরকে দেখেই আনচান মন-প্রাণ। এই না হলে ফেলুদা। সেই সঙ্গে ফেলুদা ইজ সো হট ব্লা ব্লা সব মনে হচ্ছিল। যাক গে কাজের কথা বলি।
ফেলুদা চরিত্রে আবির অসাধারণ। ইহাতে কোনো সন্দেহ নেই।তোপসে, ধীরু কাকা সকলেই ভালো। তবে গল্পে বর্ণিত শ্রীবাস্তব ডাক্তারবাবু-র সঙ্গে ছবির শ্রীবাস্তবের একটু অমিল। এ অমিল অভিব্যক্তির।
ছবিটা দেখতে দেখতে মগ্ন হয়ে গেলেও বড় একটা লাব ডাব শব্দ কিন্তু শুনতে পাই নি। কেন ? এই চিন্তাটা হল থেকে বেরোনোর পরেও মনকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। গল্পের কোনো রদ-বদল তো পরিচালক ঘটাননি। তাহলে পরিতৃপ্তির যাবতীয় রসদ-ও হাজির ছিল। তাহলে ? প্রথমেই আসি শব্দের কথায়। এর আগে 'কৈলাসে কেলেংকারী’ বা 'গোরস্থানে সাবধান ' ছবিতে পরিচালক মার পিটের দৃশ্যে যে ঝাং ক্লাং মিউজিক ব্যবহার করেছেন এ ছবিতে তার প্রয়োগ কোথায় ? এমনকি ক্লাইম্যাক্স-এ ফেলুদা-গনেশের মারপিটের দৃশ্যে-ও সেই উত্তেজনা কই ? হামলাকারী ভিলেনের পিছনে ছুটে যাওয়া ফেলুদা কিংবা মিউটিনিতে ফেলুদার ছুটে যাওয়ার মধ্যে সেই থ্রিলটা কই ! কৈলাসের গুহায় ফেলুদা আর ভিলেনের সেই মারকাটারি আকশন দৃশ্যে-র ফেটে পড়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দর্শক হয়ত ভুলে যাননি।
গনেশ গুহের চরিত্রে রজতাভ-কে লাজবাব বললে ভুল হবে না। নিষ্ঠুরতা ফোটাবার চেষ্টায় তিনি কমতি রাখেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাকে কোথায় যেন একটু ফিকে দেখিয়েছে। সে তিনি হাতে যতই সাপ নিয়ে খেলান না কেন। আর এ ছবির ভিলেন বনবিহারী বাবু ! নাহ। এ চরিত্রে পরান বন্দ্যোপাধ্যায়-কে ঠিক ততটা বলিষ্ঠ দেখায় নি। বনবিহারী বাবুর পাথুরে ভিলেনপনা, খল স্বভাব , আর চটপটে ভাব সর্বোপরি শয়তানি ঠিক পরান বাবুর মধ্যে একশ শতাংশ ফোটেনি।বরং অনেকাংশে তিনি যেন এক দিশাহারা বৃদ্ধ যে একটা দামী আংটি পাওয়ার জন্য ভুল-ভাল কাজ করে বসে। আংটিটা দেখানোর দৃশ্যে পরিচালক আর একটু নাটকীয়তা দেখালে পারতেন।
পরিশেষে একটা কথায় বলতে ইচ্ছে জাগে শেষ হয়েও হইল না শেষ।
ভালো
লিখলেন ময়ুমী গুপ্ত